obaydulbc Trainer 2 years ago |
আগের চেয়েও ব্যস্তভাবে। গাড়োয়ানকে হেঁকে বললেন— 'বিশ মিনিটের মধ্যে রিজেন্ট স্ট্রিট হয়ে সেন্ট মনিকা চার্চে যেতে হবে, আধ গিনি বকশিশ পাবে।'
‘পেছন নেব কি না ভাবছি, এমন সময়ে একটা ঝকঝকে গাড়ি এসে দাঁড়াল বাড়ির সামনে। খুব তাড়াগুড়ো করে ঘোড়া জোতা হয়েছে গাড়িতে, কোর্টের বোতাম লাগানোর সময়ও পায়নি কোচোয়ান। ঝড়ের মতো হল ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন আইরিন অ্যাডলার, গাড়িতে উঠেই হেঁকে বললেন— “বিশ মিনিটে সেন্ট মনিকার গিজেয় চল। আধ পাউন্ড বকশিশ দোব।” “ঠিক এই সময়ে একটা ছ্যাকরা গাড়ি এসে গেল সামনে। তড়াক করে লাফ মেরে ঢুকে গেলাম গাড়ির ভেতরে। চিৎকার করে
বললাম, 'সেন্ট মনিকার গিজেয় চল— বিশ মিনিটের মধ্যে যেতে পারলে আধ পাউন্ড বকশিশ।”
'উল্কাবেগে গাড়ি পৌছাল গির্জার সামনে। ভেতরে ঢুকে দেখলাম আইরিন অ্যাডলার, গডফ্রে নর্টন আর পাদরি ছাড়া কেউ আর নেই- বেদির সামনে দাঁড়িয়ে তিনজনে। আমাকে দেখেই কিন্তু তিনজনেই দৌড়ে এল আমার দিকে। আমি তো অবাক!
‘গডফ্রে নর্টন টানতে টানতে আমাকে বেদির কাছে নিয়ে গেলেন, “চলে এসো! চলে এসো! তোমাকেই দরকার! আর মোটে তিন মিনিট বাকি! সাক্ষী না-থাকলে আইনের ফাঁক থেকে যাবে।”
পরমুহুর্তে শুনলাম বিড়বিড় করে মন্ত্র পড়া হচ্ছে আমার কানের কাছে এবং আমিও তা দিব্যি আউড়ে যাচ্ছি। যা জানি না, তার সাক্ষী দিচ্ছি। অর্থাৎ গডফ্রে নর্টন আর আইরিন অ্যাডলারের বিয়েতে মধ্যস্থতা করছি। চক্ষের নিমেষে বিয়ে হয়ে গেল। সবাই খুব খুশি। এক পাউন্ড পুরস্কারও পেলাম পাদরির কাছে। ব্যাপারটা বুঝলাম। সাক্ষী ছাড়া বিয়ে দেওয়া যাচ্ছিল না- রাস্তা থেকে সাক্ষী আনতে গেলে সময় পেরিয়ে যেত- তাই আমাকে পেয়ে বর্তে গিয়েছে সকলে। এত হাসছিলাম সেই কারণেই।' “তারপর? শুধোই আমি।
"গির্জের বাইরে এসে দুজনে গেলেন দু-দিকে— যাওয়ার আগে গডফ্রে নর্টন বলে গেলেন, সন্ধে নাগাদ রোজকার মতো আসবেন। কনে ফিরলেন বাড়িতে, আমিও এলাম এখানে- তোড়জোড় করতে।'
'কীসের তোড়জোড়?'
খেয়ে নিয়ে বলব। পেটে আগুন জ্বলছে। বিকেলে তোমাকে দরকার। কাজটা কিন্তু বেআইনি। ধরা পড়ার সম্ভাবনাও আছে। রাজি ? 'এক-শোবার। উদ্দেশ্য মহৎ হলে সব কিছুতেই রাজি। কিন্তু মতলবটা কী তোমার ? খাবার এসে গেল। খেতে খেতে হোমস বললে, “উদ্দেশ্য সত্যিই মহৎ। এখন পাঁচটা বাজে। দু-ঘণ্টা পরে ব্রায়োনি লজে পৌঁছোব আমরা— আইরিন অ্যাডলার তখন খেতে ফিরবেন। “তারপর?”
'আমি ভেতরে যাব, তুমি বাইরে থাকবে। বসবার ঘরে জানলার পাশে দাঁড়িয়ে থাকবে। হাতে এই জিনিসটা রাখবে" — চুরুটের মতো একটা লম্বাটে বস্তু বাড়িয়ে দিল হোমস সামান্য ধোঁয়া-বোমা। ছুড়ে দিলেই আপনা থেকে জ্বলে ওঠে। চার-পাঁচ মিনিট পরে জানলা খুললে তুমি আমার হাতের দিকে নজর রাখবে। যখন দেখবে এইভাবে হাত মাড়ছি, বিশেষ একটা হস্তভঙ্গি করে হোমস, বোমাটা জানলা গলিয়ে ভেতরে ছুঁড়ে দিয়ে “আগুন আগুন” বলে চেঁচিয়ে উঠবে। ভিড় জমে উঠলেই সরে পড়বে। রাস্তার অন্যদিকে গিয়ে দাঁড়াবে। দশ মিনিট পরে আমি আসব সেখানে। বুঝেছ? -
'হ্যাঁ।' শোবার ঘরে গেল হোমস। ফিরে এল পাদরির ছদ্মবেশেই। শুধু পোশাক নয়, চোখ-মুখের চেহারা পর্যন্ত পালটে গিয়েছে। হোমস
অপরাধ তাত্ত্বিক হওয়ায় অভিনয় জগৎ হারিয়েছে একজন কুশলী শিল্পীকে, বিজ্ঞান জগৎ হারিয়েছে একজন চুলচেরা বিশ্লেষককে।
বেকার স্ট্রিট থেকে বেরোলাম ছ-টা বেজে পনেরো মিনিটে ব্রায়োনি লজের সামনে যখন পৌঁছোলাম তখন ল্যাম্পপোস্টের আলো জ্বলে উঠেছে।
বাড়ির সামনেটা যত ফাঁকা হবে ভেবেছিলাম, দেখলাম তা নয়। বেশ কিছু
লোক এদিকে সেদিকে হয় আড্ডা মারছে, নয় ঘোড়াফেরা করছে।
হোমস বললে, 'ওয়াটসন, নর্টন-অ্যাডলার বিয়ের ফলে আমাদের কাজ কিন্তু সহজ হয়ে এল। আইরিন অ্যাডলার এখন কখনোই চাইবেন না ছবিটা গডফ্রে নর্টনের চোখে পড়ুক। কিন্তু রেখেছেন কোথায়, সেইটাই এখন সমস্যা।'
‘সঙ্গে যে রাখেননি, সে-বিষয়ে সন্দেহ নেই। ক্যাবিনেট সাইজের ছবি মেয়েরা পোশাকের মধ্যে লুকিয়ে রাখতে পারে না- তা ছাড়া যেকোনো মুহুর্তে গ্র্যান্ড ডিউকের লোক তাঁকে ধরে সার্চ করতেও পারে।
'তাহলে ?'
কারো কাছেও রাখেননি কেননা ছবিটা কয়েকদিনের মধ্যে দরকার হবে। তা ছাড়া মেয়েরা যখন কিছু লুকোয়— নিজেরাই লুকিয়ে রাখে— কারো সাহায্য নেয় না- বিশেষ করে যাদের আত্মবিশ্বাস আছে। কাজেই ধরে নিচ্ছি ছবি তার নাগালের মধ্যেই আছে। অর্থাৎ, বাড়ির মধ্যে।
'কিন্তু বাড়ি খোঁজাও তো হয়েছে।'
"ওকে খোঁজা বলে না।'
"তুমি কী করে খুঁজবে?
'আমি তো খুঁজব না।'
“তবে?'
*উনিই দেখিয়ে দেবেন। - এই যে এসে গেছে গাড়ি।'
মোড়ের মাথায় দেখা গেল গাড়ির আলো এসে দাঁড়াল বাড়ির সামনে। সঙ্গেসঙ্গে প্রাপ্তিযোগের আশায় একজন নীচু ক্লাসের লোক দৌড়ে এসে খুলে ধরল দরজা। দৌড়ে এল আরও একজন— প্রথম জনকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিল বকশিশটা নিজেই নেওয়ার আশায়। লেগে গেল ঝগড়া। ছুটে এল আরও অনেকে। দুটাকে দল হয়ে যেতেই শুরু হল হাতাহাতি, ঘুসাঘুসি, লাঠালাঠি। হোমস দৌড়ে গেল আইরিন অ্যাডলারকে বাঁচাতে কিন্তু লাঠি খেয়ে কাতরে উঠে লুটিয়ে পড়ল রাস্তায় রক্ত ঝরতে লাগল মুখ বেয়ে। দেখেই ফর্সা হয়ে গেল হামলাবাজরা। অন্যদিক থেকে কয়েকজন ছুটে এসে ঘিরে ধরল জখম পাদরিকে আইরিন অ্যাডলার ততক্ষণে সিঁড়ি বেয়ে উঠে গিয়েছেন।
সেখান থেকেই জিজ্ঞেস করলেন, 'চোটটা কি মারাত্মক? কেউ বলল, শেষ হয়ে গিয়েছে। কেউ বললে, না, না এখনও মরেনি— নিশ্বাস পড়ছে। তবে হাসপাতাল পর্যন্ত টিকবেন কিনা সন্দেহ। আর একজন বললে ভেতরে নিয়ে যাব?"
“নিশ্চয়। বসবার ঘরে এনে সোফায় শুইয়ে দাও।”
ধরাধরি করে হোমসকে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দেওয়া হল সোফায়। আলো জ্বলল বটে, জানলার পর্দা টানা হল না। দেখলাম, ভদ্রমহিলা নিজে শুশ্রূষা করছেন আহত পাদরিকে ধোঁয়া বোমা হাতে নিয়ে তৈরি হলাম- সংকেত পেলেই ছুড়ব।
কষ্টেসৃষ্টে সোফায় উঠে বসেছে হোমস – বাতাসের অভাবে বুক যেন ফেটে যাচ্ছে। একজন ঝি গিয়ে খুলে দিল জানলা। সঙ্গেসঙ্গে সেই বিশেষ কায়দায় হাত তুলল হোমস এবং আমিও ধোঁয়া বোমা ঘরের মধ্যে ছুঁড়ে দিয়েই চেঁচিয়ে উঠলাম 'আগুন আগুন করে। একই সঙ্গে সমস্বরে আকাশফটা চিৎকার আরম্ভ করল রাস্তার লোকজন। গলগল করে পুঞ্জীভূত ধোয়া বেরিয়ে এল জানলা দিয়ে। প্রচণ্ড হট্টগোলের মধ্যে কেউ কেউ টেনে লম্বা দিলে সেখান থেকে। তারই মাঝে শুনলাম হোমসের গলা— আগুন- ফাগুন নাকি সব বাজে কথা, নিশ্চয় কেউ ভয় দেখাচ্ছে।
সরে এলাম রাস্তার কোণে। দশ মিনিট দাঁড়ালাম। হোমস এসে আমাকে টেনে নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপে এগিয়ে চলল বাড়ির দিকে।
'শাবাশ ডাক্তার!' বললে হোমস |
'ফটোটা ?”
'কোথায় আছে জেনে ফেলেছি।'
'কী করে জানলে ?'
উনি দেখিয়ে দিলে
কিছু বুঝলাম না।'
"রাস্তার লোকগুলো যে আমার ভাড়াটে অভিনেতা”, তা নিশ্চয়
“সন্দেহ হয়েছিল।"
বুঝেছ?
‘গোলমালের শুরুতে দৌড়ে গিয়েই দু-হাত মুখে রগড়ে নিয়েছিলাম— আগে থেকেই লাল রং মেখে রেখেছিলাম হাতে। জখম হওয়ার ভান করতেই বৈঠকখানা ঘরে না ঢুকিয়ে পারলেন না ভদ্রমহিলা। বাড়ির কোন ঘরে ফটাকে লুকিয়েছেন সঠিক জানতাম না। বসবার ঘরও হতে পারে, শোবার ঘরও হতে পারে। সেটা জানবার জন্যেই ঘরের মধ্যে ধোঁয়া-বোমা ছোড়ালাম তোমাকে দিয়ে।
বাড়িতে আগুন লাগলে মেয়েরা আগে সবচেয়ে দামি জিনিস বাঁচাতে ছুটে যায়। মায়েরা দৌড়োয় বাচ্চার দিকে, কুমারীরা গয়নার দিকে। আইরিন অ্যাডলার দৌড়োলেন ঘণ্টার দড়ির ওপরকার একটা আলগা তক্তার দিকে— আধখানা টেনে সরাতেই ভেতরকার ফাঁকে দেখলাম ফটোটা। তারপরেই যখন বললাম— আগুন লাগেনি, উনি যেখানকার ফটো সেখানেই রেখে দিয়ে ধোঁয়া-বোমাটার দিকে একবার তাকিয়ে বেরিয়ে গেলেন ঘর থেকে। সেই ফাঁকেই ছবিটা সরিয়ে নিলে হত, কিন্তু কোচোয়ান লোকটা ঘরে ঢুকে এমন কটমট করে চেয়ে রইল আমার দিকে যে ভরসা হল না। বেশি তাড়াহুড়ো না-করাই ভালো।' 'এবার কী করবে ?
'কাল সকাল আটটায় খোদ মহারাজকে নিয়ে যাব আইরিন অ্যাডলারের বসবার ঘরে। উনি অবশ্য নেমে এসে আমাদের কাউকেই দেখতে পাবেন না— সেইসঙ্গে দেখবেন ফটোও নেই খুপরির মধ্যে। আমি চাই মহারাজ নিজের হাতে ছবি উদ্ধার করুন। আর দেরি নয়, এখুনি লিখে জানাচ্ছি মহারাজকে। "
বেকার স্ট্রিটে পৌছে গেলাম কথা বলতে বলতে। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে চাবির জন্যে পকেটে হাত দিল হোমস। আমনি কানের কাছে শুনলাম স্বাগত ভাষণ, 'গুডনাইট, মি. শালক হোমস!'
রাস্তায় তখন গমগম করছে লোকজন। মনে হল আলস্টারধারী
শীর্ণকায় এক ছোকরার দিক থেকে ভেসে এল কথাটা। হনহন করে
আমাদের পাশ দিয়ে সে চলে গেল সামনে। শ্যেনদৃষ্টিতে সেদিকে চেয়ে মৃদুস্বরে বললে হোমস, চেনা গলা! কিন্তু লোকটা কে?
সে-রাতে আর বাড়ি ফিরলাম না বেকার স্ট্রিটের বাড়িতেই থেকে গেলাম। পরের দিন সকালে হস্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকলেন বোহেমিয়ার গ্র্যান্ড- ডিউক।
ঢুকেই হোমসের কাঁধ খামচে ধরে ব্যগ্রকণ্ঠে বললেন, 'পেয়েছেন? 'এখনও পাইনি— কিন্তু এবার পাবেন। 'তাহলে চলুন, আর দেরি নয়।'
নেমে এলাম নীচে। ব্রুহাম গাড়িতে চেপে রওনা হলাম ব্রায়োনি লজ অভিমুখে। যেতে যেতে হোমস বললে, “আইরিন অ্যাডলারের বিয়ে হয়ে গিয়েছে।
'বলেন কী? কবে ?'
'কালকে।'
'কার সঙ্গে ?
*উকিল গডফ্রে নর্টনের সঙ্গে।
“কিন্তু আইরিন কি তাকে ভালোবাসে?
"আশা করি বাসেন। আর বাসেন বলেই আপনাকে তিনি ভালোবাসেন না। তাই আপনার ভালোমন্দ নিয়ে তার আর মাথা ব্যথাও
থাকবে না।' বোবা হয়ে গেলেন গ্র্যান্ড-ডিউক। বিষাদাবরণে আবৃত রইলেন
পথের বাকিটুকু। উদবেলিত আবেগ প্রকাশ করলেন না বাইরে। ব্রায়োনি লজের সামনে গিয়ে দেখি দরজা খোলা, সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে একজন বুড়ি ঝিঁ। আমাদের দেখেই তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল, “আপনিই
কি মিস্টার শালক হোমস?'
চমকে উঠল হোমস। বলল, 'হ্যাঁ, আমিই শালক হোমস। দিদিমণি আজ ভোর পাঁচটা পনেরোর ট্রেনে চলে গেছেন। স্বামীকে নিয়ে গেছেন। বলে গেছেন, আপনি আসতে পারেন।
'সেকী! ইংল্যান্ড ছেড়ে গেছেন নাকি? ফ্যাকাশে হয়ে গেল হোমস।
মনে হল এই বুঝি টলে পড়ে যাবে।
'হ্যা। আর ফিরবেন না।'
'কাগজপত্রগুলো ? গলা ভেঙে গেল গ্র্যান্ড-ডিউকের।
খোলা, তাক ফাঁকা। ঘণ্টার দড়ির ওপরের ঢ়িলে তক্তাটা ভেঙে ফেলল হোমস। ভেতর থেকে বার করল একটা ফটো আর একটা চিঠি । ফটোটা আইরিন অ্যাডলারের। চিঠিটা শার্লক হোমসের। খামের ওপরে তার নামের তলায় লেখা : শার্লক হোমস না-আসা পর্যন্ত যেন এ- চিঠি এখানেই থাকে।
একটানে খাম ছিড়ে ফেলল হোমস। রাত বারোটার সময়ে লেখা হয়েছে চিঠি। হুমড়ি খেয়ে একই সাথে পড়লাম তিনজনে।
ডিয়ার মিস্টার শার্লক হোমস,
আপনার কাজের ধারাই আলাদা শতমুখে প্রশংসা করতে হয়।
'আগুন আগুন চিৎকার শোনার আগে পর্যন্ত বুঝিনি ফাঁদে পড়েছি। বুঝলাম যখন, তখন খটকা লাগল। কিছুদিন আগে শুনেছিলাম ছবি উদ্ধারের জন্যে আপনার দ্বারস্থ হতে পারেন মহারাজ। তাই কোচোয়ানকে আপনার পাহারায় রেখে ওপরে গিয়ে পুরুষমানুষের ছদ্মবেশ ধরলাম। জানেন তো অভিনয় জিনিসটা আমি ভালোভাবেই রপ্ত করেছি এবং বহুবার দেখেছি পুরুষের ছদ্মবেশেই কাজ হয় বেশি।
আপনার পেছন ধরে বাড়ি পর্যন্ত এসে যখন দেখলাম সত্যিই আপনি শার্লক হোমস, তখন বিবেচকের মতো গুড নাইট জানিয়ে তৎক্ষণাৎ রওনা হলাম স্বামীর সঙ্গে পরামর্শ করার জন্যে।
ঠিক করলাম, এ-রকম দুর্ধর্ষ প্রতিপক্ষর খপ্পর থেকে রেহাই পেতে হলে দেশ ছেড়ে চম্পট দেওয়া ছাড়া আর পথ নেই। তাই কাল সকালে এসে দেখবেন আমি নেই। ফটো নিয়ে দুর্ভাবনা করতে হবে না গ্র্যান্ড ডিউককে।
আমাকে ভালোবেসে যিনি বিয়ে করেছেন, তিনি ওঁর চাইতে উঁচু জগতের মানুষ। রাজা হয়ে আমাকে যে-আঘাত উনি দিয়েছেন, তার পালটা আঘাত আমি দেব না। তবে ছবিটাও দেব না। ভবিষ্যতের রক্ষাকবচ হিসেবে কাছে রাখব। তার বদলে অন্য একটা ছবি রেখে গেলাম, ইচ্ছে হলে উনি রাখতে পারেন।
বিশ্বস্ত
আইরিন নর্টন (অ্যাডলার)
উচ্ছাসে ফেটে পড়লেন গ্র্যান্ড ডিউক – মেয়ের মতো মেয়ে— আমার রানি হওয়ার উপযুক্ত। কিন্তু সমশ্রেণির নয়, এই যা দুঃখ। উচ্ছাস না-দেখিয়ে হোমস বললে, “আমিও তাই দেখছি, উনি আপনার সমান শ্রেণির নন। আফশোস রয়ে গেল কেসটাকে এর চাইতে
ভালোভাবে শেষ করা গেল না বলে।
বলেন কী! এর চাইতে ভালো শেষ আর হয় নাকি? আইরিন অ্যাডলার দু-কথা বলে না। ফটোটা পুড়ে ছাই হয়ে গেলেও এত নিশ্চিন্ত থাকতাম না। বলুন কী পুরস্কার চান আপনি? এই
আংটিটা যদি দিই-' বলে আঙুল থেকে মরকত আংটি খুলে নিলেন গ্র্যান্ড-ডিউক।
"আংটির চেয়েও দামি জিনিস কিন্তু রয়েছে আপনার কাছে?” 'কী বলুন তো?
‘এই ফোটোটা ।
"আইরিনের ফটো আপনি রাখবেন? বেশ তো নিন।
'হেট হয়ে অভিবাদন জানিয়ে আমাকে নিয়ে বাড়িমুখে রওনা হল হোমস – পেছনও ফিরে দেখল না প্রতি-অভিবাদন জানাচ্ছেন গ্র্যান্ড-ডিউক। এই ঘটনার পর থেকেই মেয়েদের বুদ্ধির দৌড় নিয়ে ব্যঙ্গ করা ছেড়ে দেয় হোমস।
Alert message goes here